গণবাণী ডট কম:
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো প্রতিবেদন আকারে হাইকোর্টকে অবহিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সোমবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরকে নিয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ তিনটি মৌখিক নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনার আলোকে আজ প্রতিবেদন জমা দিল স্বাস্থ্য অধিদফতর।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে আদালত বলেছেন, করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুতির যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। পরে বন্দরগুলোতে থার্মাল স্ক্যানার নিশ্চিতসহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়। মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিক্রির ক্ষেত্রে যাতে কেউ অতিরিক্ত লাভ করতে না পারে সেদিকে সরকারের বিশেষ নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দেশে প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন আদালত।
উল্লেখ্য, চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করেছে। এ রোগে এ পর্যন্ত ৩৮২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোগটি বিশ্বের একশ’র বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রতিবেদনে করোনা ভাইরাসের পাঁচটি নতুন লক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের লক্ষণ :
১. ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন সময় লাগে।
২. প্রথম লক্ষণ জ্বর।
৩. এরপর শুকনো কাশি।
৪. এক সপ্তাহের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
৫. পরবর্তীতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন— কিউনি অকার্যকর হতে পারে এবং মৃত্যুও হতে পারে।
রোগের চিকিৎসা :
১. যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন, তাই এর কোনও টিকা/ভ্যাকসিন এখনও নেই।
২. চিকিৎসা দিতে হয় লক্ষণভিত্তিক।
৩. অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং মাস্ক ব্যবহার করুন।
প্রতিরোধ বিষয়ক নির্দেশনা :
এই রোগ যেভাবে প্রতিরোধ করতে হবে—
১. ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুবেন (অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে)
২. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।
৩. এরমধ্যেই আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
৪. হাঁচি/কাশির সময় বাহু/টিস্যু/কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন।
৫. অসুস্থ পশু/পাখির সংস্পর্শ পরিহার করুন।
৬. মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাবেন।
৭. জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত চীন ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।
সন্দেহভাজন রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয় :
১. অসুস্থ রোগীদের ঘরে থাকতে বলুন।
২. মারাত্মক অসুস্থ রোগীকে কাছের হাসপাতালে যেতে বলুন।
৩. রোগীকে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন।
৪. আইইডিসিআর এর হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করুন।
এর আগে গত ৫ মার্চ করোনার বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিক কয়েকটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। পরে করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়ে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
এক. স্থলবন্দর, নৌবন্দর, বিমানবন্দর, বিশেষ করে বিমানবন্দরে যখন বিদেশিরা বাংলাদেশে আগমন করছেন, তখন অভ্যন্তরে প্রবেশের আগে তাদেরকে কি ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে, যারা পরীক্ষা করছেন তারা প্রশিক্ষিত কিনা, এবং যে যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেগুলোর সক্ষমতা রয়েছে কিনা, তা জানাতে বলেন আদালত।
দুই. সারাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা ভাইরাসের জন্য পৃথক কেবিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এখনও প্রাক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আদালত নির্দেশনা দেন— সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও করোনা ভাইরাসের জন্য প্রাক প্রস্তুতিমূলক সব ধরনের ব্যবস্থা (পৃথক কেবিনসহ চিকিৎসকের সরঞ্জাম) গ্রহণ করতে হবে।
তিন. প্রত্যেকটি হাসপাতালে বা বন্দরে যেখানে শনাক্তের জন্য করোনা ভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজন হবে, সেখানকার জন্য ওই সরঞ্জাম দেশে পর্যাপ্ত রয়েছে কিনা, যদি না থাকে জরুরি ভিত্তিতে আমদানি করার জন্য সরকারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।