গণবাণী ডট কম:
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরার পরের দিন মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে দীর্ঘ ৭৮৭ দিন পর দলীয় কার্যালয় ছেড়ে বাসায় উঠেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
দেশের রাজনীতির এক ক্রান্তিকালে দলীয় নেতাকর্মী গ্রেফতারের প্রতিবাদে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি বাসা ছেড়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন রিজভী। একটানা ৭৮৭ দিন স্বেচ্চায় দলীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ থাকার পর ২০২০ সালের ২৬ মার্চ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে দলীয় কার্যালয় ছাড়লেন তিনি। এ সময় রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, এখন থেকে আর অফিসে সেভাবে রাতে অবস্থান করা হবে না। তবে দলীয় প্রয়োজনে যতটুকু সময় দরকার ততটুকু সময় কার্যালয়ে থাকবেন তিনি। দেশের রাজনৈতিক ক্রান্তিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেন রিজভী। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত প্রতিকূল। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন ভয়ঙ্কর আতঙ্কে। ওই সময় দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী সদ্য কারামুক্ত বেগম খালেদা জিয়ার মামলা বিচারাধীন থাকায় রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় রায়ের দিন ধার্য করেছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। সেদিন আদালত খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দিলে ওইদিনই পুরনো ঢাকার সাবেক পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়।
এর আগে এবং পরে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বহু মামলা দায়ের হয়। গ্রেফতার করা হয় অনেককে। ফলে দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছিল। অবশ্য সেই বছরই ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর হোটেল লা-মেরিডিনে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতাদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন খালেদা জিয়া। এরপর একই বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি গুলশানে নিজ কার্যালয়ে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তিনি। এহেন পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে শঙ্কা তৈরি হয়। গ্রেফতার করা হয় বহু নেতার্মী। তখন থেকেই রিজভী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে, খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি দলীয় কার্যালয়েই অবস্থান নেবেন তিনি।
সেই ব্রত থেকেই নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় ছোট একটি রুমে (সাড়ে ৪ বাই সাড়ে ৯ ফুট) নির্জন কক্ষে অনেকটা স্বেচ্চা অবরুদ্ধ থেকে রাত্রি যাপন করে করছিলেন তিনি। সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা তার সাথে নিয়মিত কুশল বিনিময় ও প্রয়োজনীয় কাজের জন্য যাতায়াত করতেন। সেখানে দলীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা নেতা-কর্মীদের নানা সমস্যার কথা শুনেছেন। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সংবাদপত্রে রাজনৈতিক ইস্যুতে বিভিন্ন প্রবন্ধও লেখেছেন। ওইসব প্রবন্ধের সংকলনে ‘সময়ের স্বরলিপি’ গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন এই অফিসে থেকেই। যার প্রকাশনার অনুষ্ঠান হয় কার্যালয়ের নিচতলায় গত ৬ মার্চ।
রিজভীর এই দীর্ঘ সময়ের অবস্থানকালে মাঝে-মধ্যে তার সহধর্মিণী আনজুমান-আরা আইভি কার্যালয়ে এসে কিছু সময় স্বামীর দেখভাল করতেন। এই দীর্ঘ সময়ের অবস্থানকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ, ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাবৃন্দ, যুগ্ম মহাসচিবগণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদসহ অনেক পেশাজীবী নেতারা এসে রিজভীর ছোট কক্ষে গিয়ে তার খোঁজ-খবর নিয়েছেন।