গণবাণী ডট কম:
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা যন্ত্র, যার মাধ্যমে রোগীর স্বাস প্রস্বাস চালু রাখা হয় তার নাম ভেন্টিলেটর। করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে পরস্থিতি গুরুতর হলে রোগীর নিউমোনিয়া হয়, ফলে তার ফুসফুসের নিচে অংশ পানি জমে যায় এবং তখন শ্বাস গ্রহণ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ভেন্টিলেটর ছাড়া ওই রোগী তখন আর শ্বাস নিতে পারে না। যন্ত্রটি তখন ফুসফুস থেকে পানি ও রোগীর দেহ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে নিয়ে আসে এবং ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে কৃত্রিমভাবে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখে।
বাংলাদেশে এ সেবা আরো বিস্তৃত করার লক্ষে বিশ্বমানের ভেন্টিলেটর তৈরি করার এক মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক নিজে এই উদ্যোগের সমন্বয় করছেন। সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে যার যার সক্ষমতা অনুযায়ী এই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করেছেন। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে সম্পৃক্ত হয়ে ওয়ালটন, মাইওয়ান, মিনিস্টারসহ কয়েকটি দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদক কোম্পানি এই ভেন্টিলেটর তৈরি করবে।
এর আগে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও যাতে চিকিৎসক ও রোগীদের জন্য দ্রুততম সময়ে ভেন্টিলেটর তৈরি করতে পারে তারজন্য নিজেদের ভেন্টিলেটরটির ডিজাইন স্পেসিফিকেশন উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেয় মেডট্রনিক পিএলসি।
মঙ্গলবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, এদিন দুপুরেই বিশ্বখ্যাত মেডিকেল প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদক কোম্পানি মেডট্রোনিক ভেন্টিলেটর বানানোর সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের সোর্স কোড, ডিজাইনসহ পেটেন্ট তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের আরএনডি টিমকে দিয়েছে।
‘এখন টেসলা, ফোর্ড, জেনারেল ইলেক্ট্রনিক্স ভেন্টিলেটর বানাতে যাচ্ছে। সেখানে মেডট্রোনিক বাংলাদেশকে শুধু পেটেন্ট নয় তাদের গবেষক ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সবরকম সহায়তার হাত বাড়িয়েছে’ জানান পলক।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ভেন্টিলেটর বানানোর এই উদ্যোগে ওয়ালটন, মাইওয়ান, সেলট্রন, এটুআই ইনোভেশন ল্যাব, এমআইএসটি, মিনিস্টার, স্টার্টআপ বাংলাদেশ, আইডিয়াকে প্রাথমিকভাবে যুক্ত করা হয়েছে।
তবে দেশে কী পরিমাণ ভেন্টিলেটর উৎপাদন করা হবে, কবে নাগাদ বাজারে আসবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। মেডট্রোনিক ও বাংলাদেশের গবেষকদের কয়েকটি টিম, উৎপাদক কোম্পানি লাগাতার কাজ করছে। এসব বিষয়ে সবাইকে নিয়ে বৈঠক-আলোচনা হবে, সেখানে মেডট্রোনিকের প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে ধারণা পাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, বাংলা টাইগার টিম মেডট্রোনিকের কাছ হতে ভেন্টিলেটরের পেটেন্ট বুঝে নিয়েছে। স্থানীয়ভাবে যেসব চ্যালেঞ্জ আসবে তা এই টিম সলভ করতে পারবে।
এটুআইয়ের পলিসি এডভাইজার আনীর চৌধুরী জানান, সারা পৃথিবীতে এখন ১০ লাখ ভেন্টিলেটরের চাহিদা। সে তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা ১০ ভাগের এক ভাগ। বাংলাদেশ যদি এটি উৎপাদন করতে পারে তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতেও ভূমিকা রাখতে পারবে। সেক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতিতেও এই দু:সময়ে অবদান রাখা যাবে।
এর আগে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও যাতে চিকিৎসক ও রোগীদের জন্য দ্রুততম সময়ে ভেন্টিলেটর তৈরি করতে পারে তার জন্য নিজেদের ভেন্টিলেটরটির ডিজাইন স্পেসিফিকেশন উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেয় মেডট্রনিক পিএলসি।
এ ঘোষণাটি সাম্প্রতিক এফডিএ নির্দেশনা এবং বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা সরকারি সংস্থাসমূহের নিয়মের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ উল্লেখ করে মেডট্রনিক এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের জন্যও এর পেটেন্ট উন্মুক্ত করেছে। এর ফলে, স্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারও খুব দ্রুত ভেন্টিলেটর উৎপাদন করতে পারবে।
এছাড়াও, মেডট্রনিকের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের সদস্যরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভেন্টিলেটর উৎপাদনের জন্য এ দেশীয় প্রকৌশলীদের সহায়তা দেবে।
২০১০ সালে বাজারে আসে পিবি ৫৬০। বাজারে অবমুক্ত হওয়ার পর বিশ্বের প্রায় ৩৫টি দেশে বিক্রি হয় এই ভেন্টিলেটরটি। এ ভেন্টিলেটরটির প্রযুক্তিগত নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে উৎপাদন প্রতিষ্ঠান, উদ্ভাবক, স্টার্টআপ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহজেই এ ভেন্টিলেটর নকশা ও প্রস্তুত করতে পারবে।
উল্লেখ্য, পিবি ৫৬০ ভেনটিলেটরটি সুবিন্যাস্ত, ওজনে হালকা ও বহনযোগ্য। একারণে, ভেনটিলেটরটির মাধ্যমে বয়স্ক ও শিশুদের সহজেই অক্সিজেন দেয়া যাবে। ভেন্টিলেটরটি খুব সহজেই যে কোন পরিচর্যা কেন্দ্রে (ক্লিনিক্যাল সেটিং) ও বাসায় ব্যবহারের জন্য উপযোগী। এবং এর মাধ্যমে মোবাইল রেসপিরেটরি সাপোর্ট দেয়া যাবে।
ভেন্টিলেটর কী?
করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুসে আক্রমণ করে, কখনও কখনও এমন অবস্থা তৈরি হয় যে রোগী ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারে না।
এসময় রোগীর দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে রোগীর মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গও অচল হয়ে যেতে পারে। এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ভেন্টিলেটর। এই যন্ত্রটি তখন নাক কিম্বা মুখের ভেতর দিয়ে অথবা গলায় ছিদ্র করে লাগানো টিউবের সাহায্যে ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং দেহ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের কিরে নিয়ে আসে। কম্পিউটারের সাহায্যে এই যন্ত্রটি পরিচালনা করা হয়।
কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে পরস্থিতি গুরুতর হলে রোগীর নিউমোনিয়া হয়, ফলে তার ফুসফুসের নিচে অংশ পানি জমে যায় এবং তখন শ্বাস গ্রহণ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
ভেন্টিলেটর ছাড়া ওই রোগী তখন আর শ্বাস নিতে পারে না। যন্ত্রটি তখন ফুসফুস থেকে পানি ও রোগীর দেহ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে নিয়ে আসে এবং ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে কৃত্রিমভাবে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখে।
রোগী যতক্ষণ পযন্ত স্বাভাবিকভাবে নিশ্বাস গ্রহণ করতে না পারে ততক্ষণ ভেন্টিলেটর লাগানো থাকে। এসময় তিনি কথা বলতে পারেন না, মুখ দিয়ে কিছু খেতেও পারেন না। সেসময় তাকে টিউবের সাহায্যে খাবার দেওয়া হয়।
খবর : বাসস।