গণবাণী ডট কম:
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে টিকা দেয়া শুরু হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা আগামী ২১ থেকে ২৫শে জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছাবে বলে সরকার জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হবে।
আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৫০ লাখ ডোজ টিকা সরকারিভাবে দেশে পৌছাবে। টিকা আসার পর দুই দিন তা বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউজে থাকবে। গাজীপুরের টঙ্গিতে বেক্সিমকোর দুইটি ওয়্যারহাউজ রয়েছে। সেখান থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন জেলায় টিকা নির্ধারিত ইপিআই কোল্ড স্টোরেজে পৌঁছানোর দায়িত্ব পালন করবে বেক্সিমকো। ২৭ তারিখের মধ্যে জেলা পর্যায়ে এ টিকা পৌঁছাবে। আর ফেব্রুয়ারির শুরুতে টিকা পাবে দেশের মানুষ।
‘প্রথম ডোজ দেওয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ দিতে হবে। তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার নতুন তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ডোজ দেওয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যাবে। নতুন নিয়ম জানার পর আমরা পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছি। এ কারণে প্রথম মাসেই একসঙ্গে ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। প্রথম যে ৫০ লাখ টিকা আসবে তা দিয়ে দেওয়া হবে। দুই মাসের মধ্যে আরও টিকা চলে আসবে।’
মি. আলম বলেছেন “ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হবে। আগে ২৫ লক্ষের কথা বলা হলেও এখন ৫০ লক্ষ মানুষকে প্রথম ডোজ দেয়া হবে।”
টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হবে ২৬শে জানুয়ারি থেকে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
প্রথমে যে ৫০ লক্ষ টিকা আসবে তার পুরোটাই দিয়ে দেয়া হবে। আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় চালান আসলে সেই ৫০ লক্ষও পুরো দিয়ে দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে টিকা বিতরণ কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন টিকা বিতরণ কমিটির সদস্য অধ্যাপক শামসুল হক।
অধিদপ্তর বলছে, নিরাপত্তার দায়িত্বে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে। তবে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বলা হয়েছে অতিরিক্ত ভিড় না করে যাদের ভ্যাকসিনের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে, তারাই যাতে টিকা নিতে যান সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর মাথা ঝিমঝিম করা, ব্যথা, বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। তবে সেটা ২ থেকে ৩ ভাগের বেশি না। যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোধে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম কাজ করবে বলেও তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের টিকা নেওয়ার নিবন্ধনের নিয়ম:
* অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপল দুই স্টোরেই অ্যাপটি পাওয়া যাবে। যেকোনও স্মার্টফোনে এটি ডাউনলোড করতে হবে।
* অ্যাপ ডাউনলোডের পর করোনাভাইরাসের টিকা নিতে আগ্রহীরা মোবাইল ফোন নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন।
* টিকাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ব্যক্তিদেরও নিবন্ধন করতে হবে।
* নিবন্ধনের জন্য প্রত্যেককে নাম, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পেশা, শারীরিক জটিলতাসহ বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
* প্রত্যেক ব্যক্তি করোনাভাইরাসের দুটি করে ডোজ পাবেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের বিস্তারিত তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে।
* কোন মাসে কার কার বা কোন শ্রেণিপেশার মানুষ টিকা পাবেন তা প্রতি মাসে জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর মোবাইল অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন আগ্রহীরা।
* নিবন্ধিত ব্যক্তিদের তালিকা অনুযায়ী কবে ও কখন কাকে টিকা দেওয়া হবে, কোথায় ও কোন সময় তারা টিকা পাবেন, সবকিছু ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী নির্ধারিত কেন্দ্রে হাজির হয়ে টিকা নেওয়া যাবে।
ভ্যাকসিনেশনের সেন্টার:
উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজেপি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়ার জন্য সাত হাজার ৩৪৪টি দল তৈরি করা হয়েছে। একটি দলের মধ্যে ছয়জন সদস্য থাকবে। এর মধ্যে দু’জন টিকাদানকারী (নার্স, স্যাকমো, পরিবারকল্যাণ সহকারী) ও চারজন স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এবং অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বক্তব্য রাখেন।
টিকা প্রদানের বিভিন্ন ধাপ:
• নিবন্ধন: জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে ব্যক্তি নিবন্ধন
• ভ্যাকসিন কার্ড: ওয়েব পোর্টাল হতে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ
• এসএমএস বার্তা প্রেরণ: ভ্যাকসিন প্রদানের তারিখ ও তথ্য প্রেরণ
• প্রথম ডোজ: নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে প্রদান
• দ্বিতীয় ডোজ: নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে প্রদান
• ভ্যাকসিন সনদ: দুইটি ডোজ নেওয়ার পর পোর্টাল হতে সংগ্রহ